শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
রহমত বরকত মাগফেরাত নাজাতের মাস রমজান। এ মাসের মর্যাদার ইবাদত ইতেকাফ। মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর। মর্যাদার দান-সাদকা জাকাত। এ মাসের প্রতি কাজের বিনিময় মহান আল্লাহ বান্দাকে বিশেষভাবে দান করবেন। জাকতও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। এ মাসে জাকাত আদায়কারী হবে মুত্তাকি। তাদের অবস্থান হবে জান্নাতের ফোয়ার সংলগ্ন স্থানে।
রমজান মাসে জাকাতের মাধ্যমে ধনীদের জন্য জান্নাতের প্রাপ্তি ও প্রতিদান অতুলনীয়। আল্লাহ তাআলা জাকাত আদায়কারীদের জন্য সর্বোত্তম পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। জাকাত দেওয়া ব্যক্তিরাই থাকবে জান্নাতে। তারাই মুত্তাকি। জান্নাতের ফোয়ারার কাছেই স্থান পাবে তারা। জাকাত দিতে ধনীদের রয়েছে বিশেষ করণীয়। জাকাত দেওয়া ও এর প্রতিদান সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
জাকাত দেওয়া আর্থিক ইবাদত ও সবচেয়ে উত্তম নেক আমল। কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে জাকাত দেওয়া ব্যক্তিদেরও মুত্তাকি বলা হয়েছে। জাকাতের দুনিয়ার প্রতিদান ও সুফল ছাড়াও পরকালে ধনীরা পাবে জাকাতের বিশেষ পুরস্কার। একটি হলো- তারা মুত্তাকি হিসেবে বিবেচিত হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো- তারা জান্নাতের ফোয়ারার সন্নিকটে অবস্থান করবে। আবার তাদের পুরস্কারের কথাও বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
১. اِنَّ الۡمُتَّقِیۡنَ فِیۡ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوۡنٍ – اٰخِذِیۡنَ مَاۤ اٰتٰهُمۡ رَبُّهُمۡ ؕ اِنَّهُمۡ کَانُوۡا قَبۡلَ ذٰلِکَ مُحۡسِنِیۡنَ – کَانُوۡا قَلِیۡلًا مِّنَ الَّیۡلِ مَا یَهۡجَعُوۡنَ – وَ بِالۡاَسۡحَارِ هُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ – وَ فِیۡۤ اَمۡوَالِهِمۡ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَ الۡمَحۡرُوۡمِ
‘মুত্তাকিরা জান্নাতের ফোয়ারার কাছে থাকবে। তাদের পালনকর্তা তাদের যা দেবেন তারা তা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তারা ছিল (আমলে সালেহ) নেক কাজে অংশগ্রহণকারী; তারা রাতের সামান্য অংশেই ঘুমায় আর শেষ রাতে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাদের ধন-সম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ (সুরা জারিয়াত : আয়াত ১৫-১৯)
২. اِلَّا الۡمُصَلِّیۡنَ – الَّذِیۡنَ هُمۡ عَلٰی صَلَاتِهِمۡ دَآئِمُوۡنَ – وَ الَّذِیۡنَ فِیۡۤ اَمۡوَالِهِمۡ حَقٌّ مَّعۡلُوۡمٌ – لِّلسَّآئِلِ وَ الۡمَحۡرُوۡمِ – وَ الَّذِیۡنَ یُصَدِّقُوۡنَ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ – وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ مِّنۡ عَذَابِ رَبِّهِمۡ مُّشۡفِقُوۡنَ
‘তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী, যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে এবং যাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে প্রার্থী (সাহায্য প্রার্থী) ও বঞ্চিতের এবং যারা প্রতিফল দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং যারা তাদের পালনকর্তার শাস্তি সম্পর্কে ভীত-কম্পিত।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ২২-২৭)
দানের প্রতিদান
জাকাত হলো সর্বোত্তম দান। জাকাতের উত্তম প্রতিদান পাওয়ার একটি বিশেষ উপায় হলো- জাকাত দেওয়ার সময় উত্তম সম্পদ দিয়ে জাকাত দেয়া। তা হতে পারে উত্তম আচরণ। আর দানের ক্ষেত্রে ভালোবাসা ও পছন্দের জিনিস দান করার কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-
لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ
‘তোমরা কখনো প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তা ব্যয় করবে, যা তোমরা ভালোবাস। আর তোমরা যে বস্তুই ব্যয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯২)
দান বা জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি সর্বোত্তম জিনিস ব্যবহার করা না হয় তবে পরকালে তার দান অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া হবে বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আউফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে আমাদের কাছে এলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। আমাদের এক ব্যক্তি মসজিদে নিকৃষ্ট মানের একগুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ওই খেজুরগুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন- এর (খেজুরের) দানকারী ইচ্ছা করলে এর চেয়েও উত্তম (খেজুর) দান করতে পারতো। তিনি আরও বলেন- এর (খেজুরের) দানকারীকে কেয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ)
উত্তম প্রতিদান পাওয়ার উপায়
জান্নাতে সর্বোত্তম প্রতিদান পেতে হলে যেমন উত্তম জিনিস দিয়ে দান-অনুদান ও জাকাত দেওয়া জরুরি তেমনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা গরিব-অসহায়ের মধ্যে সাধ্য মতো উত্তম জিনিস বণ্টন করে দিতে হবে। আর যারা লোক দেখানোর জন্য কিংবা সুনাম কামানোর জন্য অথবা বাহবা পাওয়ার জন্য জাকাত বা দান-অনুদান দেবে, পরকালে তাদের জন্য এ দানের কোনো অংশই অবশিষ্ট থাকবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-
‘আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখানোর জন্য (আমল করতে); (এখন তাদের কাছে (প্রতিদান বা পুরস্কারের জন্য) যাও। দেখো, তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি?’ (মুসনাদে আহমাদ)
জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দাকে দান করবেন জান্নাত। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘আপনি আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে জানিয়ে দিন; যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন-
‘তার কী হয়েছে? তার কী হয়েছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বললেন, তার বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখবে।’ (বুখারি)
ধনী ও সম্পদশালীর করণীয়
নিজের সম্পদকে স্বচ্ছ রাখতে এবং জাহান্নামের আজব থেকে বাঁচতে যথাযথভাবে জাকাত দিতে হবে। জাকাতই মানুষের মুত্তাকি হওয়ার উপায় এবং জাকাত দেওয়ার মাধ্যমেই তারা জান্নাতের ফোয়ারার কাছে স্থান পাবে।
নিজ উদ্যোগী হয়ে জাকাত পাওয়ার যোগ্য গরিব-অসহায় ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে জাকাতের অর্থ পৌঁছে দিতে হবে। জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে দুনিয়ায় নিজের সম্পদকে স্বচ্ছ ও পবিত্র করতে হবে আবার মুত্তাকি বান্দা হয়ে পরকালে জান্নাতের সর্বোচ্চ নেয়ামত পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদের মালিক ও ধনী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত জাকাতের সর্বোত্তম প্রতিদান পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।