এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ জয়পুরহাটবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য উপহার। দেশে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরি করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে আইসিটি খাতে যথাযথ অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। সাড়ে ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার ৫০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর ও স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। মাত্র ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে প্রযুক্তি শিল্প থেকে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার। আমাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়। আমরা আশা করছি আগামী দেড় বছরের মধ্যে এ আইটি ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে ও দুই বছরের মধ্যে এখানে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো। এখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আসলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলারই আধুনিক রূপ। প্রতিযোগিতার এ যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নেই। সরকার এজন্যই একটি প্রযুক্তিনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছে। ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখানকার তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরি দেবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এ কারণে যে আজ জয়পুরহাটে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলো। এর মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন জয়পুরহাটবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারা বলেন, জয়পুরহাটে যে গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়ে এসেছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন জয়পুরহাটবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। এ আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের মাধ্যমে আইটি/আইটিইএস খাতে জয়পুরহাটের যুব সমাজের আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৬৪টি জেলায় আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক। এরই অংশ হিসেবে জয়পুরহাটে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। জয়পুরহাট ছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় আরও ১০টি জেলায় (মানিকগঞ্জ, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বান্দরবান, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, দিনাজপুর ও মেহেরপুর) শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ও সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১১টি জেলায় প্রায় ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে স্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। এর আগে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষরোপণ করেন ও প্রকল্প এলাকার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার, কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ও কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।