শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
কোরআন আল্লাহর বাণী। নবি ও সাহাবাদের মুখে কোরআনের তেলাওয়াত শুনে খ্রিস্টান ও নাসারাদের অধিকাংশ আলেম, দরবেশসহ বাদশাহ নাজ্জাশী কান্না করেছিলেন। কোরআনের তেলাওয়াত শুনে ইসলামের সত্যতায় অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে এ ঘটনার আয়াত দিয়েই শুরু হবে পঞ্চম তারাবি। সুরা মায়েদার ৮৩নং আয়াতে ছোট্ট একটি দোয়ার আবেদনসহ এ ঘটনা এভাবে ওঠে এসেছে-
وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ ۚ یَقُوۡلُوۡنَ
‘রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয় তারা যখন তা (কোরআন তেলাওয়াত) শুনে, তুমি দেখবে, সত্যকে চিনতে পারার কারণে তখন তাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। তারা বলে-
رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আমান্না ফাকতুবনা মাআশ শাহিদিন।‘
‘হে আমাদের রব! আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও সাক্ষীদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নিন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৩)
এ আয়াতে মুসলিমদের সঙ্গে শক্রতা ও বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে সেসব আহলে কিতাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সত্যানুরাগ ও আল্লাহভীতির কারণে মুসলিমদের প্রতি হিংসা ও শক্রতা পোষণ করত না। কিন্তু ইয়াহুদিদের মধ্যে এ জাতীয় লোকের সংখ্যা ছিল খুব কম। তাদের দৃষ্টান্ত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমূখ।
নাসারাদের মধ্যে হিংষা-বিদ্বেষমুক্ত লোকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। বিশেষত নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল বেশি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তখন তিনি হজরত জাফর ইবন আবু তালেব, ইবন মাসউদ, উসমান ইবন মাযউনসহ একদল সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন।
তারা সেখানে সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছিল। মক্কার মুশরিকরা এ খবর পেয়ে আমর ইবন আসকে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে নাজ্জাশীর কাছে পাঠায়। তারা বাদশাহ নাজ্জাশীকে অনুরোধ জানায় যে, এরা আহম্মক ধরণের কিছু লোক। এরা বাপ-দাদার দ্বীন ছেড়ে আমাদেরই একজন লোক; যে নিজেকে নবি বলে দাবি করেছে, তার অনুসরণ করছে। আমরা তাদেরকে ফেরৎ নিতে এসেছি।
বাদশাহ নাজ্জাশী বিষয়টি জেনে মুসলিমদের ডাকলেন। হজরত জাফর ইবন আবু তালেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঈসা এবং তার মা সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কী?
জবাবে তিনি বললেন, ‘ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা এবং তার এমন কালেমা যা তিনি তার পক্ষ থেকে মারইয়ামের কাছে অর্পণ করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ।’
হজরত আবু জাফর ইবন আবু তালেবের মুখে একথা শুনে নাজ্জাশী একটি কাঠি উঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা যা বলেছ, তার থেকে ঈসা আলাইহিস সালাম এ কাঠি পরিমাণও বেশি নন। এরপর নাজ্জাশী তাদেরকে বললেন, ‘তোমাদের উপর যা নাজিল করা হয়েছে, তা থেকে কি আমাকে কিছু শুনাতে পার? তারা বললেন, ‘হ্যাঁ’।
বাদশাহ নাজ্জাশী বললেন, পড়। তখন হজরত জাফর ইবন আবু তালেব কোরআনের আয়াত পড়ে শোনালেন। সেসময় নাজ্জাশীসহ তার দরবারে যেসব নাসারা আলেম ছিলেন তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন।’ (তাবারি, বাগভী)
এরপরই সেখানে উপস্থিত অনেকেই ইসলামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে মুসলমান হয়ে যান। আর আল্লাহুর কাছে এভাবে দোয়া করেন-
رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আমান্না ফাকতুবনা মাআশ শাহিদিন।‘
‘হে আমাদের রব! আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও সাক্ষীদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নিন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৩)
পরের আয়াতেও নাসারা আলেমদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের কথা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেন-
وَ مَا لَنَا لَا نُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَا جَآءَنَا مِنَ الۡحَقِّ ۙ وَ نَطۡمَعُ اَنۡ یُّدۡخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الصّٰلِحِیۡنَ
‘আর আল্লাহর প্রতি ও আমাদের কাছে আসা সত্যের প্রতি ঈমান না আনার কি কারণ থাকতে পারে; যখন আমরা প্রত্যাশা করি যে, আমাদের রব আমাদেরকে নেককার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন?’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৪)
আবিসিনিয়ার ‘হাবশা’ নামক স্থানে, যেখানে মুসলিমগণ মাক্কি জীবনে দুইবার হিজরত করেছিলেন; যেখানে বাদশাহ আসহামা নাজ্জাশীর শাসন ছিল। এটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বলে পরিচিত ছিল। এই আয়াতটি হাবশায় অবস্থানরত খ্রিষ্টানদের শানেই অবতীর্ণ হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি চিঠি লিখে হজরত আমর বিন উমায়ইয়াহ যামরি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাদশাহ নাজ্জাশীর কাছে পাঠান। তিনি চিঠি নিয়ে নাজ্জাশীর কাছে গিয়ে তা পাঠ করে শুনান।
নাজ্জাশী এ চিঠি শোনার পর হাবশায় আগে থেকে অবস্থানরত মুহাজির হজরত জাফর ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে আনেন। পাশাপাশি তাঁর স্বধর্মীয় আলেম, আবেদ, দরবেশ ও পন্ডিতগণকেও একত্রিত করেন। এরপর হজরত জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কোরআন পাঠ করার নির্দেশ দেন।
হজরত জাফর সুরা মারইয়াম থেকে তেলাওয়াত করেন। যেখানে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের অলৌকিক জন্ম বৃত্তান্ত ও আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল হওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। তারা সবাই তেলাওয়াত শুনে বেশি প্রভাবিত হন। তাঁদের চোখ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় এবং তাঁরা সবাই ঈমান আনয়ন করেন।
আবার কেউ কেউ বলেন, ‘বাদশাহ নাজ্জাশী তাঁর কিছু সংখ্যক ওলামাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের কাছে পাঠান। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের সামনে কোরআন পাঠ করে শুনান, তখন তাঁদের চোখ দিয়ে অনায়াসে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। আর তাঁরা সবাই ঈমান আনেন।’ (ফাতহুল কাদির)
কোরআন তেলাওয়াত শুনে যেভাবে তাঁরা প্রভাবিত হয়েছিলেন, উল্লিখিত আয়াতে তার চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। এই শ্রেণির খ্রিষ্টান ও নাসাদের ঈমান আনয়নের কথা কোরআনের বেশ কিছু জায়গায় উল্লিখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلّهِ
‘নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক নিঃসন্দেহে এমনও আছে, যারা আল্লাহর উপর এবং তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের এবং তাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান রাখে, তারা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত।‘
এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাদশাহ নাজ্জাশীর মৃত্যুর সংবাদ পেলেন, তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, হাবশাতে তোমাদের ভাই নাজ্জাশীর ইন্তেকাল হয়েছে, তাঁর জানাজার নামাজ আদায় করো। সুতরাং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গায়েবি জানাজার নামাজ আদায় করলেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
আহলে কিতাবের অনুসারী ইসলাম গ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ ঘোষণা দেন-
فَأَثَابَهُمُ اللّهُ بِمَا قَالُواْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاء الْمُحْسِنِينَ
‘এরপর তাদের এ কথার জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করেছেন জান্নাত; যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত; তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা মুহসিন সৎকর্মশীলদের পুরস্কার।‘ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৫)
রমজানের ৫ম তারাবিতে হাফেজে কোরআনগণ সুরা মায়েদার বাকি অংশ ধারাবাহিকভাবে তেলাওয়াত করবেন। সুরা আনআমসহ সুরা আরাফের ১১ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে। কোরআনের সত্য বিধান, হৃদয় আলোকিত করা সুন্দর ঘটনা এবং দোয়ার তেলাওয়াত শুনে আবেগ ও ভালোবাসায় উজ্জীবিত হবেন রোজাদার মুমিন মুসলমান।
আল্লাহর একাধিক হুকুম অমান্য করার কাফফারাস্বরূপ রোজা রাখার গুরুত্বপূর্ণ বিধানও আজ পড়া হবে। ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদান সম্পর্কে কোরআনের নির্দেশনা জানা যাবে।
আল্লাহ তাআলা ভালো কাজের সাওয়াব ১০ গুণ সওয়াব দেবেন। কিন্তু মন্দ কাজের প্রতিদান তা-ই পাবে, যা সে করবে। আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি এতবেশি দয়ালু যে, তিনি বান্দাকে ভালো কজে ১০গুণ সাওয়াব দেন আর মন্দ কাজ যা হবে তার পরিণামও সমান। হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে এ ঘোষণা ওঠে আসবে এভাবে-
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَن جَاء بِالسَّيِّئَةِ فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ (প্রতিদান) পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬০)
এটা হলো আল্লাহ তাআলার সেই দয়া ও অনুগ্রহের বর্ণনা, যা ঈমানদারদের উপর তিনি করবেন। আর তাহলো- একটি নেকির বিনিময় তিনি ১০টি নেকী দ্বারা দেবেন। আর এটা হলো সবচয়ে কম প্রতিদান। তাছাড়া কোরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কোনো কোনো নেকির প্রতিদান কয়েক শ’; এমন কি কয়েক হাজার গুণ পর্যন্ত দেওয়া হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজের শুধু ইচ্ছা করে, তার জন্য একটি নেকি লেখা হয়; ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করুক বা না করুক। এরপর যখন সে সৎকাজটি সম্পাদন করে, তখন তার আমলনামায় ১০টি নেকি লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের ইচ্ছা করে, এরপর তা কার্যে পরিণত না করে, তার আমলনামায়ও একটি নেকি লেখা হয়। এরপর যদি সে ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করে, তবে একটি গুনাহ লেখা হয়। কিংবা একেও মিটিয়ে দেওয়া হয়। এমন দয়া ও অনুকম্পা সত্বেও আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তিই ধ্বংস হতে পারে, যে ধ্বংস হতেই দৃঢ়সংকল্প।‘ (বুখারি, মুসলিম)
নবিজী আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে ১০টি সৎকাজের সওয়াব পায় বরং আরো বেশি পায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গুনাহ করে সে তার শাস্তি এক গুনার সমপরিমাণ পায় কিংবা তাও আমি মাফ করে দেবো। যে ব্যক্তি পৃথিবী ভর্তি গুনাহ করার পর আমার কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তার সঙ্গে ততটুকুই ক্ষমার ব্যবহার করবো। যে ব্যক্তি আমার দিকে আধাহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই বাহু প্রসারিত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ (মুসনাদে আহমাদ)
আর যে পাপমূহের শাস্তি নির্ধারিত নয় এবং যেগুলো করার পর পাপী তা থেকে তওবা করেনি অথবা তার পুণ্যের হার পাপের তুলনায় কম হবে কিংবা আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে তা ক্ষমা করবেন না, তখন আল্লাহ এই পাপের জন্য শাস্তি দেবেন এবং তা পাপের সমপরিমাণই দেবেন।
সুরা মায়েদা : ৮৩-১২০
কুরআনের সাত নম্বর পারার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা সত্যের অনুসারি তাদের প্রশংসা করেছেন। এরপর মুমিন বান্দার পুরস্কার এবং অবধ্যতাকারীদের পরিণাম আলোচনার পর শপথের কাফফার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে ওঠে এসেছে সুরা মায়িদার ৮৯নং আয়াতে। আবার অযথা কসম করার কারণে কাফফারা স্বরূপ রোজা রাখা কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
لاَ يُؤَاخِذُكُمُ اللّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُواْ أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেণির খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দেবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ ( সুরা মায়েদা : আয়াত ৮৯)
আজকের তারাবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান ঘোষিত হবে মদ-জুয়া ও মূর্তিপুজারীদের বিষয়ে। এ সুরার ৯০ ও ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, ভাষ্কর্য, প্রতিকৃতি ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে।
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, জিকির ও নামাজ থেকে তোমাদের দূরে রাখতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?’
এ সুরার ৯৫নং আয়াতে ইহরাম অবস্থায় শিকার করার বিধানও দেয়া হয়েছে। যার কাফফারা স্বরূপও দেয়া হয়েছে রোজার বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقْتُلُواْ الصَّيْدَ وَأَنتُمْ حُرُمٌ وَمَن قَتَلَهُ مِنكُم مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاء مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَو عَدْلُ ذَلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوقَ وَبَالَ أَمْرِهِ عَفَا اللّهُ عَمَّا سَلَف وَمَنْ عَادَ فَيَنتَقِمُ اللّهُ مِنْهُ وَاللّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের মধ্যে যে জেনে শুনে শিকার বধ করবে, তার উপর বিনিময় ওয়াজেব হবে, যা সমান হবে ঐ জন্তুর, যাকে সে বধ করেছে। দুইজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা দেবে। বিনিময়ের জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে কাবায় পৌঁছাতে হবে। অথবা তার উপর কাফফারা ওয়াজেব হবে- কয়েকজন দরিদ্রকে খাওয়ানো অথবা তার সমপরিমাণ রোজা রাখতে হবে। যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল আস্বাদন করে। যা হয়ে গেছে, তা আল্লাহ মাফ করেছেন। যে পুনরায় এ কাজ করবে, আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৯৫)
সুরাটির শেষ দিকে ইয়াহুদি খ্রিস্টানদের উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইয়াহুদির শক্তি খর্ব করে মুসলিম সম্প্রদায়ের শক্তি বৃদ্ধি এবং ইসলামের সঠিক নীতি অবলম্বন করে পূববর্তী কিতাবের নীতি পরিহারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার শেষাংশে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। যে দোয়ায় রয়েছে রিজিক ও রুটি-রুজির বরকতের আবেদন। যা মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই উপযোগী। আল্লাহ তাআলা দোয়াটি এভাবে তুলে ধরেছেন-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আংযালনা মায়েদাতাম মিনাস সামায়ি তাকুনু ইদাল লিআউয়্যালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতুম মিনকা ওয়ারযুক্বনা ওয়া আংতা খায়রুর রাযিক্বিন।‘
‘হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুজি দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রুজিদাতা।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)
সর্ব শেষ দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বিধান পালনকারীদের প্রতি সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। মুমিনরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন। যাকে ইসলামে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قَالَ اللّهُ هَذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আল্লাহ বললেন আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্যে উদ্যান রয়েছে, যার তলদেশে নির্ঝরিনী প্রবাহিত হবে; তারা তাতেই চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই মহান সফলতা।‘ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১১৯)
لِلّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১২০)
সুরা আনআম
মক্কায় নাজিল হওয়া ২০ রুকু ও ১৬৫ আয়াত সমৃদ্ধ কুরআনের ৬নং সুরা হলো ‘সুরা আনআম’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কাজ শুরুর পর ১২ বছর অতিবাহিত হয়। এ বছরগুলোতে কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতা জুলুম অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌছেছিল।
ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি দল কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগ তথা হিজরতে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্বনবিকে সহযোগিতার জন্য তখন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আবু তালেব কেউ তখন জীবিত ছিলেন না। চরম প্রতিকূলতাপূর্ণ মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা মক্কায় এ সুরা নাজিল করেন।
> ১ থেকে ৪১ পর্যন্ত
কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদানের পর তাদের হঠকারী আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা একটু চোখ মেলে দেখ এবং ভাব। তোমরা যা বলছ ও করছ তা কতটুকু সঠিক? আল্লাহ তাআলা বলেন-
أَلَمْ يَرَوْاْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاء عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الأَنْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ
তারা কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে আমি পৃথিবীতে এমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দেইনি। আমি আকাশকে তাদের উপর অনবরত বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি এবং তাদের তলদেশে নদী সৃষ্টি করে দিয়েছি, এরপর আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৬)
> ৪২ থেকে ৯০ পর্যন্ত
আগের ধারাবাহিকতায় আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস ও ঈমানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানেও কাফেরদের মনে জাগা ও মুখে তোলা অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও আখেরাতের স্থায়িত্বের কথা উল্লেখ করে মোমিন সম্প্রদায়কে নসিহত করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ঘটনার বর্ণনা এসেছে। কীভাবে তিনি নিজ সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَقَدْ أَرْسَلنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
‘আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। এরপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি মিনতি করে।‘ (সুরা আনআম : আয়াত ৪২)
فَلَوْلا إِذْ جَاءهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُواْ وَلَـكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
‘এরপর তাদের কাছে যখন আমার আজাব এলো, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করলো না ? বস্তুতঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখালো, যে কাজ তারা করছিল।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৪২)
> ৯১ থেকে ৯৪ পর্যন্ত
বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাজিলের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা এবং অন্যদিকে কুরআনের সাথে কাফের সম্প্রদায়ের আচরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
> ৯৫ থেকে ১১০ পর্যন্ত
তায়ালা নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কীভাবে বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন, এর কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। অতপর তিনি ঈমানদারদের জন্য কিছু নিদর্শন তুলে ধরেন। আল্লাহ বলেন-
وَهُوَ الَّذِيَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ انظُرُواْ إِلِى ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ إِنَّ فِي ذَلِكُمْ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৯৯)
> ১১১ থেকে ১২৯ পর্যন্ত
চোখের সামনে এতসব নিদর্শন দেখেও অনেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে না। তারা উল্টো হঠকারী আচরণ করবে। এদের পরকালীন জীবন কত কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক হবে, তা বলা হয়েছে। মানুষকে কিছু বিশেষ নসিহত করা হয়েছে, যাতে মানুষ আল্লাহ তাআলা, কিতাব, নবি ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনতে পারে।
> ১৩০ থেকে ১৫৪ পর্যন্ত
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহ তায়ালা কী খাদ্য হারাম করেছেন, আর ইহুদিদের জন্য কী হারাম করেছিলেন, তার একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা বিকৃত ইহুদি ধর্মের সঠিক রূপ বলে দিয়েছেন। ওই ধর্মে বাস্তবে কী কী নিষিদ্ধ ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
অতপর এ সুরার বাকি অংশে কুরআনের স্বার্থকতা ও উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। শেষ দিকে মানুষের জীবন সবকিছু মহান রবের জন্য এ কথার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘(হে রাসুল!)আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতি পালক আল্লাহরই জন্যে।‘ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
সর্বোপরি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ পরিশ্রম ও অক্লান্ত চেষ্টা সাধনায় যখন ইসলামের প্রচার ও প্রসার ফলপ্রসু হচ্ছিল না তখন প্রিয়নবি ও মুসলমানদের হতাশা ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকেই মূলতঃ সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে এ সুরায়।
সুরা আরাফ
মক্কায় নাজিল হওয়া সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২০৬। রুকু সংখ্যা ২৪। আজ সুরার ১১টি আয়াত পাঠ কা হবে। এ সুরাটিও সুরা আনআমের সমকালীন সময়ে নাজিল করা হয়েছে। তবে এ সুরায় বিশ্বনবির রিসালাতের প্রতি ঈমানের ব্যাপারে তাগিদ করা হয়েছে। এ সুরায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আনুগত্য করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ করাই হলো সুরার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
৫ম তারাবির শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তার নির্দেশ পালনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে ফেরেশতাকুল আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করেছিল। আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করেছিল কিন্তু শয়তান তা অমান্য করে। আর এটি মুমিন মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ নসিহত। মুমিন মুসলমান ফেরেশতাদের মতো বিনা প্রশ্নে আল্লাহর নির্দেশ পালন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ
‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তোমাদের আকৃতি প্রদান করেছি, তারপর আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা করো। এরপর ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করলো। সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।‘ (সুরা আরাফ : আয়াত ১১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝে বাস্তব জীবনে আমল করার তাওফিক দান করুন। তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতের বিষয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ ও ত্যাগের গুণাবলী অর্জন করে কোরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পাদক : আয়াতুল্লাহ মোঃ ফয়েজ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মোঃ মশিয়ুর রহমান খান
উপ সম্পাদক : অহিদুর রহমান প্রিন্স
Developed by: GreenBD IT
সকল যোগাযোগ : ৬৯৫-২/জে, মানিকদী, ঢাকা কেন্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬
নিউজ রুম মোবাইল : ০১৫৫৬৫৫৩৬৬৬
নিউজ রুম ই-মেইল : pallibarta.news@gmail.com
pallibarta.com এর সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত