বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ফোঁটায় ফোঁটায় তেলে পরোটা ভাজা চলে

মাথার ওপর ঝুলছে সয়াবিন তেলের বোতল। স্বচ্ছ চিকন নল বেয়ে তাওয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় তেল পড়ছে। যৎসামান্য সেই তেল দিয়েই চলছে পরোটা ভাজা। গত কয় দিনে সয়াবিন তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেল। তেলের খরচ কমাতে এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন এক হোটেল ব্যবসায়ী। নাম তাঁর আবদুল হামিদ।

সাধারণত বাজারে সয়াবিন, পাম, শর্ষে, সূর্যমুখী, রাইস ব্র্যানসহ নানা রকমের ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। সহজলভ্য ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে এসব তেলের মধ্যে সয়াবিন সবচেয়ে জনপ্রিয়। সম্প্রতি সেই সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন অনেক হোটেল ব্যবসায়ী।

আন্তর্জাতিক বাজারদর বিবেচনায় নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৮ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই দর চললেও সম্প্রতি তেলের মিলার ও ডিলাররা সয়াবিনের দাম বাড়ানোর দাবি তোলেন। কিন্তু আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকার সে প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তার পর থেকেই হঠাৎ বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যায়। আর এতেই বেড়ে যায় সয়াবিন তেলের দাম। সংকট ও বাড়তি দামের কারণে অনেকেই সয়াবিন তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়ে ওঠেন।

এখন বোতলের গায়ের মূল্য তুলে দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাম তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তেল সাশ্রয়ে বোতল থেকে নল দিয়ে তাওয়ার ওপর ফোটায় ফোটায় পড়া সয়াবিন তেলে মচমচে পরোটা ভাজছেন আব্দুল হামিদ। গতকাল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর বাজার এলাকায়

তেল সাশ্রয়ে বোতল থেকে নল দিয়ে তাওয়ার ওপর ফোটায় ফোটায় পড়া সয়াবিন তেলে মচমচে পরোটা ভাজছেন আব্দুল হামিদ। গতকাল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর বাজার এলাকায়
তেল সাশ্রয়ে বোতল থেকে নল দিয়ে তাওয়ার ওপর ফোটায় ফোটায় পড়া সয়াবিন তেলে মচমচে পরোটা ভাজছেন আব্দুল হামিদ। গতকাল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর বাজার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কে মথুরাপুর বাজার। সেই বাজারে খাবার হোটেলের ব্যবসা করেন আবদুল হামিদ। স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলটি নিজেই চালান। সেখানে পরোটা, ভাতসহ নানা খাবার পাওয়া যায়। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, আবদুল হামিদ আটা বেলার পর একের পর এক তাওয়ায় ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁর মাথার ওপর ঝুলছে একটি সয়াবিন তেলের বোতল। সেখান থেকে স্বচ্ছ নল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল পড়ছে তওয়ায়। সেই তেলে আবদুল হামিদ ভেজে চলছেন মচমচে পরোটা। তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম আর মেয়ে ইমু আকতার সেই পরোটা ভোক্তাদের প্লেটে তুলে দিচ্ছেন।

কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হয় আবদুল হামিদের সঙ্গে। তিনি জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীন। বাড়তি দরে তেল কিনে পরোটা তৈরি করতে গিয়ে তাঁর পোষাচ্ছিল না। এরপর পরোটার দাম বাড়িয়ে বিক্রির কথাটাও ভাবলেন। কিন্তু ক্রেতাদের কথা ভেবে চুপসে গেলেন তিনি। পরে তেল সাশ্রয়ের কথাটি তাঁর মাথায় আসে। একপর্যায়ে তেল সাশ্রয়ের প্রক্রিয়াটিও তাঁর ভাবনায় চলে আসে। বাজার থেকে একটি চিকন সাদা পাইপ কিনে তা সয়াবিন তেলের বোতলে লাগিয়ে দেন। আর তেল নিয়ন্ত্রণের জন্য পাইপে লাগিয়ে দেন স্যালাইন সেটের একটি চাকা। বোতল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল তাওয়ায় পড়তে লাগল আর তিনি সেই তেল দিয়ে পরোটা ভাজতে লাগলেন।

আবদুল হামিদের স্ত্রী জানান, প্রতিদিন তাঁদের হোটেলে ৫০০ পরোটা ভাজা হয়। সেসব পরোটা ভাজতে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার তেল লাগে। এখন ফোঁটায় ফোঁটায় তেল দেওয়ার কারণে এক লিটার তেল কম যাচ্ছে। এতে তাঁদের সাশ্রয় হচ্ছে।

সকাল সোয়া আটটায় হামিদের হোটেলে নাশতা খেতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম। নাশতা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘তেল সাশ্রয়ে হামিদ ভাইয়ের এই উদ্ভাবন দেখে খুশি হয়েছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের সময় পরোটার দাম না বাড়িয়ে কীভাবে আগের দামেই (৫ টাকা) বিক্রি করা যায়, সেটার একটা কৌশল উদ্ভাবন করেছেন তিনি।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদি বলেন, ‘তেলের সংকট সাময়িক। তেলের সরবরাহ কম হলেও কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত তদারক করছি।’

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০