২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ এসএমই ফাউন্ডেশনের
২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ এসএমই ফাউন্ডেশনের
করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকা নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই বিতরণ করছে সংস্থাটি।
দুই দফায় মাত্র সাড়ে ৪ মাসে ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ হাজার ১৮১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে নারী-উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৬ শতাংশ। পুরুষ উদ্যোক্তা প্রায় ৭৪ শতাংশ। ঋণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৬২ জন ট্রেডিং খাতের, ১ হাজার ১৬৭ জন উৎপাদন খাতের এবং ৪৭৭ জন সেবা খাতের। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তাই ৫ লাখ টাকার চেয়ে কম ঋণ পেয়েছেন।
এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রমের জন্য প্রথম দফায় ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ বিতরণের চুক্তি স্বাক্ষর করে এসএমই ফাউন্ডেশন। দ্বিতীয় দফায় আরও ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হল- ব্র্যাংক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেসিক ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশের প্রায় ১০০টি এসএমই ক্লাস্টার, চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য উদ্যোক্তা, নারী-উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণকে ঋণ প্রদান করে।
বিদায়ী বছরের ২১ মার্চে সংস্থাটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে পরিচালক পর্ষদের সভায় এই ঋণ কর্মসূচি বিতরণ বিষয়ক নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুমোদন করা হয়। এতে অতিমারির কারণে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্যাটাগরির করে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ক্যাটাগরিগুলো হল- যারা সরকারের প্রথম দফার প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকার আওতায় ঋণপ্রাপ্ত হন নি, অগ্রাধিকারভূক্ত এসএমই সাব-সেক্টর এবং ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, নারী-উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা, পশ্চাদপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাগণ।
এসএমই ফাউন্ডেশন নিজে ঋণ বিতরণ করে না করে থাকলেও নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ বিতরণের মূল কারণ ছিল ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ট্রেডবডি-অ্যাসোসিয়েশন এবং ক্লাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সংস্থাটির নিবিড় যোগাযোগ এবং সমন্বয় সাধন। ফলে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ হাজার ১০৬ জন সিএমএসএমই উদ্যোক্তার মধ্যে দ্রুততম সময়ে ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ সম্পন্ন করেছে।
প্রসঙ্গত, প্রথম দফায় ২০২০-২১ অর্থবছরে মে থেকে জুন মাসে অর্থাৎ মাত্র দেড় মাস সময়ে ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৯২৫ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ হার সুদে ঋণ পেয়েছেন। প্রথম দফায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে দ্বিতীয় দফায় আরও বেশি উদ্যোক্তাকে ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
গ্রামীণ অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এরমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা ছাড় করে অর্থ বিভাগ।
