মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরার এক স্কুলেই ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ

করোনাকালে সাতক্ষীরার এক স্কুলেই ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ ।। শিক্ষার্থীরা না এলেও প্রশাসনিক কাজে মহামারির এই দেড় বছরে প্রায় নিয়মিত স্কুলে গেছেন মো. আব্দুল লতিফ। তিনি আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় নামের ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। স্কুলটির অবস্থান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শেষ প্রান্তে আলীপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছেন আব্দুল লতিফ। তবে শূন্য বেঞ্চগুলো পূর্ণ হয়ে স্কুলটি আবার কলরবে ভরে উঠবে, এমনটা আশা করতে পারছেন না তিনি। কারণ, এই স্কুলের অন্তত ৫০ ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে।

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আব্দুল লতিফ জানেন, বিয়ে হওয়ার পর খুব কম শিক্ষার্থীই আবার পড়াশোনায় ফিরতে পারে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় নানা অজুহাতে বাল্যবিবাহ দেওয়ার প্রবণতা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। করোনাকালে এ বছর স্কুলের ৬৬ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০ জনের হয়েছে বাল্যবিবাহ।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সদর উপজেলার ইউএনও এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির যতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করার কথা ছিল, করোনার কারণে তারা ততটা করতে পারেনি। এক সপ্তাহের মধ্যে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করা হবে।

সাতক্ষীরার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম আলোর কাছে হিসাব তুলে ধরে জানানো হয়েছে, বাল্যবিবাহ হয়েছে এমন ৫০ জনের মধ্যে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রী রয়েছে ৩২ জন। দশম শ্রেণির ১৪ জন, নবম শ্রেণির ৭ জন এবং অষ্টম শ্রেণির ১১ জন রয়েছে। এ ছাড়া ১৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। স্কুলে থাকা তথ্য অনুসারে এই মেয়েদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর।

বিয়ে হওয়া বাকি ১৬ জনের ৩ জন দশম শ্রেণির এবং ১৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের বয়স বাল্যবিবাহের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৮ বছর পেরিয়েছে। স্কুলে মোট ছাত্রীসংখ্যা ৪৭০।

গত বছর (২০২০) স্কুলটিতে ৩২ ছাত্রীর বিয়ে হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, এবার স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮ জন। এদের মধ্যে ৪৭ জন ফরম পূরণ করেছে, বাকি ২১ জন ফরম পূরণ করছে না কেন, খোঁজ করতে শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন, প্রত্যেকটি মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে। দশম, নবম ও অষ্টম শ্রেণির মেয়েদের বাল্যবিবাহের তথ্য ধরা পড়ে তারা অ্যাসাইনমেন্ট জমা না দেওয়ায়। তিনি বলেন, পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তারা আর পড়বে না।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, দুই মাস আগে তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৪৭ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার তালিকা পাঠিয়েছিলেন। গত দুই মাসে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, যাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তাদের কেউ কেউ স্কুল কোচিংয়ে যোগ দিয়েছে।

আলীপুর ইউনিয়নের সরকারঘোষিত বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্য আলীপুর পূর্ব পাড়া সুন্নি মসজিদের খতিব এবং স্থানীয় কাজি মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহ আইনসংগত না হওয়ায় নিবন্ধনও হয় না। নিবন্ধন ফরমের নকল বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন দোকান বিক্রি করে। কিছু মাওলানা কাজি সেজে সেই সব নকল ফরমে বিয়ে পড়ান।

করোনাকালে বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সর্বশেষ জরিপ (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এমআইসিএস) বলছে, দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের কর্মপরিকল্পনায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, এ হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২০-২১ সালে এই হার কতটুকু কমেছে বা বেড়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি।

সূত্র : প্রথম আলো

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১