শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৪০ ভাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বলে জানিয়েছেন মেয়র ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ১১তম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মেয়র এ কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। সেখান থেকে ঠিকানা পর্যালোচনা করে দেখেছি, এক হাজার ৮৩২ জন (দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের)। তাতে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪০ দশমিক ৩১ ভাগ রোগী শনাক্ত করা গেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরের অনেক রোগী পাচ্ছি।’
‘আক্রান্তদের ঠিকানা আলাদা করতে হয়, আমরা এলাকার ঠিকানা চিহ্নিত করি। এরপর কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে মশক কর্মীরা সব ঠিকানায় গিয়ে উৎস স্থলগুলো প্রাথমিকভাবে ধ্বংস করেন। পরিপূর্ণভাবে ৪০০ গজের মধ্যে লার্ভিসাইডিং করা হয়। বিকেলে আবার পুরো এলাকাটা ফগিং করা হয়।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা ঢাকাবাসীকে এডিস মশা থেকে মুক্ত রাখার জন্য সর্বাত্মক জনবল ও শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে চলেছি। সেই প্রেক্ষিতে যদি সামগ্রিকভাবে বলতে হয়, ২০১৯ সালকে নির্ণায়ক হিসাবে ধরি, সেখানে আমাদের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে যেটা পেয়েছি, সেটা যাতে কোনোক্রমেই পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই পর্যায়ে যেন ঢাকাবাসীর ভোগান্তি না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা সর্বাত্মক কার্যক্রম নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামে গত জুলাই মাসে ৩৭ হাজার ৪২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় জুলাই মাসে ১০ হাজার ৩৭১ জন। ভারত এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিচ্ছে না। তাতে বুঝা যায় কত বেশি সেখানে হতে পারে। এটা হচ্ছে এশিয়ার পারিপার্শ্বিকতা।’
তাপস বলেন, ‘একটি বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে এই এলাকায় এডিস মশা বিস্তারের অভয়ারণ্য হয়ে থাকে। বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে এডিস মশা বেশি হবে। সেটাই আমরা লক্ষ্য করছি। এবার এডিস মশা অনুকূল আবহাওয়া পেয়েছে।’
‘শ্রাবণ মাসে পুরোটাই বৃষ্টি হয়েছে। ভাদ্র মাসেও বৃষ্টি চলমান। আবহাওয়ার যে তথ্য আমরা পেয়েছি, আগামী সাতদিনও বৃষ্টি হবে। এটা আমাদের জন্য একটি বড় প্রতিকূলতা। দ্বিতীয় প্রতিকূলতা হলো- অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আমাদের উৎস স্থল বিপুল সংখ্যক। এখন বিশেষ করে গড়ে উঠেছে ছাদবাগান, ছোট ছোট আধারের যে উৎসস্থল এগুলো ধ্বংস করা খুবই দুরুহ।’
মেয়র বলেন, ‘তারপরও আমাদের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে ঢাকাবাসীকে এডিস মশা থেকে অনেকখানি পরিত্রাণ দিতে পারছি। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি এডিস মশার বিস্তারকে।’
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘তথাপিও বলব, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। তারপরও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩৫ জন ইন্তেকাল করেছেন। বিশেষ করে যেটা কষ্টদায়ক সেটা হলো বাচ্চারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আশা করি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, অভিভাবকরা আরও সচেতন হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে এখন আরও (ডেঙ্গু রোগী) কমে আসবে। একটু বিরতি হলে দেখছি, মাঝখানে তিনদিন ছুটি গিয়েছিল, এর পরই লক্ষ্য করেছি আবার রোগীর সংখ্যা একটু বেড়ে গেছে। রোগী প্রায় ৩০০-এর ঘরে চলে গিয়েছিল। এটাকে আবার ২০০-এর ঘরে নিয়ে এসেছি। আবহাওয়াটা অনুকূলে আসলে আশাবাদী শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারব।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।