বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কৃষিকাজে ঝুঁকছে জিম্বাবুয়ের তরুণরা

বেশ কিছুদিন আগেও জিম্বাবুয়ে যেখানে অর্থনৈতিক তারল্যের অভিশাপে হিমশিম খাচ্ছিল সেখানে কেবল কৃষিকে কেন্দ্র করেই অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশটি। বর্তমানে দেশটির শিক্ষিত তরুণরা কৃষিকাজে ব্যাপক আগ্রহী হচ্ছে। তাদের এই আগ্রহ এবং পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতেই করোনাসময়ে যখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে তখন জিম্বাবুয়ে রের্কড পরিমাণ ফসল তুলেছে নিজেদের ঘরে।

চলতি বছর জিম্বাবুয়ের ভূট্টা উৎপাদনে জোয়ার এসেছে। এ বছর জিম্বাবুয়েতে প্রায় ৩০ লাখ টন ভূট্টা উৎপাদিত হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এই উৎপাদন বিগত ২০ বছরের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির তথ্যমন্ত্রী মণিকা মুতওয়াঙ্গা। তার বরাত দিয়ে জানা যায়, গত বছর ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

একটি জরিপে দেখা যায়, দেশটির ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪৭ শতাংশ পুরুষ যাদের সকলের বয়স ২১ থেকে ৩০ এর মধ্যে, তারা সকলেই কৃষিকাজকে নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রধান পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাদের হাত ধরেই জিম্বাবুয়েতে এখন আম উৎপাদন, গবাদি শিল্পের উন্নয়ন এবং তামাক ও ভূট্টা চাষের মতো কৃষিশিল্পে নতুন এক বিপ্লব সাধিত হচ্ছে।

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানওয়াগা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানা যায়। তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে সবথেকে আলোচিত হয়েছে আস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাদা চামড়ার কৃষক আমদানি করা যারা একসময়ে জিম্বাবুয়েতেই কাজ করত। সাদা চামড়ার এসকল কৃষকদের কাছে বেশ কিছু ভূমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। সাদা এবং কালো চামড়ার কৃষকদের পাশাপাশি কাজ করায় পুঁজির ভাগাভাগি থেকে শুরু করে দক্ষতা এবং যান্ত্রিক সুবিধার জায়গাটিতে একটি বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।

এছাড়াও সমগ্র দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামো কারখানামুখী না হয়ে এখন মাঠমুখী হচ্ছে বলে জানা যায়। জিম্বাবুয়ের কৃষি বিশেষজ্ঞ গিফত মাওয়াচা বলেন, ‘সরকার তরুণদের মধ্যে কৃষি নিয়ে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করার সুফল এখন সমগ্র দেশ ভোগ করছে। এখন তরুণরা বলছে আমরা এতদিন বেকার ছিলাম। এখন মাঠে আলু এবং গম উৎপাদন করেই স্বাবলম্বী হতে পারছি।’

ইতাই শেজে (২৯) জিম্বাবুয়ের একজন তরুণ সমাজবিজ্ঞানী। সমাজবিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি তিনি ভূট্টার আবাদও করে থাকেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মে বেকারত্ব ছিল সবথেকে বড় অভিশাপ। প্রতিবছর অনেক ছেলে স্নাতক শেষ করে বেকার বসে থাকত। দেশে কর্মসংস্থান ছিল সীমিত। এখন শিক্ষিত এই তরুণেরা কৃষিকাজে ঝুঁকছে। এতে করে একদিক দিয়ে তারা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিক দিয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।’

জিম্বাবুয়ে সরকার এই কৃষি বিপ্লবের নাম দিয়েছে ‘ফুমভুডজা’ (কৃষকদের সেরা বিপ্লব)। সরকার তরুণদের আকৃষ্ট করতে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছে। এই বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কত অল্প জমি থেকে কত বেশি পরিমাণে ফসল ঘরে তোলা যায়। গবেষক এডি মাসায়া ফুমভুডজাকে জলবায়ুর আদর্শ উপায় হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা জমির ক্ষুদ্র অংশের সর্বাধিক ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষণ চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭