শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
করোনা মহামারির কারণে পুরো পৃথিবী ক্রন্তিকাল পার করছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের আঘাতে আমাদের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশেষ করে চিকিৎসাক্ষেত্র অনেকটাই বিধ্বস্ত। কোনো হাসপাতালে শয্যা, ওয়ার্ড, আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট), এইচডিইউ (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট) খালি নেই। রোগীদের অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনের সংকট কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কর্মরত ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়রা পরিশ্রান্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত। এমন সময়ে দেশে ডেঙ্গির হানা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্যান্য জেলায় ডেঙ্গি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও রাজধানীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার প্রতিদিন বেড়েই চলছে। করোনার তাণ্ডবে ডেঙ্গির হানায় রাজধানীবাসী নাকাল।
আমরা একই সঙ্গে ভাইরাসজনিত দুটি প্রাণ হরণকারী রোগের বিরুদ্ধে লড়ছি। যার মধ্যে ডেঙ্গি আমাদের চেনা শত্রু। আমরা জানি এডিস মশার বংশবিস্তার বন্ধ করতে পারলে বা প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডেঙ্গির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে করোনা হলো আমাদের অচেনা শত্রু। এডিস মশার মতো এর কোনো বাহক নেই। যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনকি এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধও নেই। যে ওষুধ খেলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চলমান এই পরিস্থিতিতে দেশের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করও শরীরে জ্বর বা জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই করোনা এবং ডেঙ্গি পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে এমন রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, যারা ডেঙ্গি ও করোনায় একই সঙ্গে আক্রান্ত। এসব রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
সাধারণভাবে ডেঙ্গির লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গি হতে পারে। ডেঙ্গিকে ‘ব্রোকেন বোন ফিভার’ও বলা হয়ে থাকে। কারণ ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হলে অনেকের শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। ব্যথার তীব্রতা এতটাই বেশি থাকে যে মনে হয় হাড় ভেঙে যাচ্ছে। এই জ্বরের কারণে অনেক আক্রান্তের শরীরে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্লাটিলেট কমে রক্তক্ষরণ ঘটতে দেখা যায়। এ অবস্থায় রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে না পারলে রোগীর জীবণ ঝুঁকিতে পাড়তে পারে। ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে শরীর থেকে প্লাজমা বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এতে বুকে-পেটে পানি জমে রোগী শকে চলে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ডেঙ্গি শক সিনড্রোম। প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ ছাড়া ডেঙ্গিরও সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তাই আক্রান্ত হলে কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া চলবে না।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের লক্ষগুলো হলো-রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। কেউ কেউ আক্রান্ত হওয়ার পরে খাবারের স্বাদ বা কোনো গন্ধ পান না। অর্থাৎ ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় ও স্বাদ ইন্দ্রিয় লোপ পায়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। করোনায় ফুসফুসে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। এসব ক্ষেত্রে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউ সাপোর্ট না দিলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
করোনা রোগেরও কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাই আলসেমি না করে রোগাক্রান্ত হওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়া যাবে না। অক্সিজেনের মাত্রা ৯২/৯৩-এ নেমে এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে অবশ্যই এডিসের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। এই মশা গৃহপালিত মশা। তাই বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে কোথাও যেন তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছোট ছোট শিশুকে ফুল হাতা জামা, প্যান্ট পরাতে হবে।
অন্যদিকে কোভিডের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। গণজমায়েত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এর পাশাপাশি অবশ্যই টিকা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা মনেই পরিবার-পরিজনকে সুরক্ষিত রাখা।
{
যুগান্তর}