শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ

আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও টাকা দিলেই চালু হয়ে যায় সংযোগ। পুরো রাজধানীজুরে চলছে এই গ্যাসের অবৈধ কর্মকান্ড। টাকার ভাগ যায় প্রভাবশালী আর তিতাসের কর্মকর্তাদের পকেটে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মিরপুরে একটি বস্তি থেকেই তিতাসের লোকসান মাসে কোটি টাকা। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীও স্বীকার করলেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও তিতাসের দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুরের বিশাল এক বহুতল ভবনে রান্নার চুলা গ্যাসে নয়, জ্বলে আলাদিনের চেরাগে। ভবনের সামনে গ্যাসের বড় বড় সিলিন্ডার বসিয়ে ভবনের অন্য পথ দিয়ে ঢুকেছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।
২০১৩ সাল থেকে আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও তা চলছে অবৈধ ভাবে। মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরার তুরাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সংযোগের জাল ছড়িয়েছে প্রভাবশালী আর তিতাসের অসাধু কর্মকর্তারা। কোথাও কোথাও বাড়িতে সংযোগের চিহ্ন পর্যন্ত নেই; তবু সংযোগ চলে গেছে ভবনে। অবৈধ এ সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমের ওপর চড়াও হন ভবনের মালিকরা।

এই যখন আবাসিক ভবনের অবস্থা, তখন বস্তিগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। মিরপুরের ১৪ নম্বর বস্তি, সেখানেই অবৈধ সংযোগ রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এসব বস্তি থেকেই মাসে উঠে আসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। যার ভাগ পায় তিতাসের কর্মকর্তারাও। সেখানে গ্যাস সংযোগের দায়িত্বে রয়েছে লিটন নামে এক ব্যক্তি।লিটন বলেন, ঘটনা সত্য, এতে কোনো অসুবিধা নেই। এখানে বৈধের মধ্যে কিছু অবৈধ লাইন কম-বেশি আছে।
তিতাসের গ্যাস চুরির বিষয়ে মন্ত্রীও যেন অসহায় কর্মকর্তাদের কাছে। নানা সময় কঠোর ব্যবস্থা নিলেও পরিবর্তন হয়নি তিতাসের। স্বীকার করলেন জ্বালনি প্রতিমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যদি কোনো মানুষের চরিত্র নিজে থেকেই খারাপ থাকে, তাহলে সেটাকে ভালো করা মুশকিল। অবৈধ লাইনের সঙ্গে যুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে। তবে তিতাসের দুর্নীতি অনেকটাই কমেছে বলে দাবি তার।

জ্বালনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাসের বিতরণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি।কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ করে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করেছে, তার ক্ষতিপূরণের জন্য তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি সিস্টেম লস বা আর্থিক ক্ষতি ৭৬৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেখিয়েছে বিতরণ সংস্থা তিতাস।বছর বছর তিতাস যে সিস্টেম লস বা ত্রুটি জনিত লোকসান দেখায় তার সিংহভাগের কারণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধান বলছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে তিতাসের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিতাসের আর্থিক ক্ষতি কমাতে স্বচ্ছতা জরুরি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।

সুত্র : সময় সংবাদ

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০