শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
অতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, কৃত্রিম খাদ্য ও অতিরিক্ত তেল, চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরতা জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এ সকল অস্বাস্থ্যকর খাবার একদিকে মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী, জটিল ও ভয়াবহ সব অসংক্রামক রোগ সৃষ্টি করছে। অপরদিকে, এ সকল রোগের চিকিৎসা করাতে ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রের ব্যয়ও ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ তথা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বিকেলে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিতে করনীয়‘ শীর্ষক অলোচনা সভায় এ খাতের বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বাস্তবায়ন) এস এম সোহরাব উদ্দিন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় রিসার্চ এন্ড এপিডেমিওলোজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের কারণ অসংক্রামক রোগ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমানে শাকসবজি গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয় অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ। ১০টি কৃষি খাতে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লেখানো বাংলাদেশে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। এ সকল ফল ও সবজি পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এ অবস্থায় নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান এবং নগরে শাকসবজি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নগরকৃষি নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় কৃষকের বাজার গড়ে তোলার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, দৈনন্দিন জীবনে কৃষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অনেকেই তাদের যথাযথ সম্মান দেই না। কৃষকদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় এই বিষয়টিও নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উৎসাহী করে তুলতে ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে তৃতীয় হলেও অনেক সময়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে এবং এর আওতায় নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজ বসত ভিটায় পারিবারিকভাবে নিরাপদ শাক সবজি উৎপাদন করা হলে নিরাপদ ও পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য যেমন সহজলভ্য হবে সেই সাথে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ইপসা, ইলমা, বি-স্ক্যান, আলিফ আইডিয়াল স্কুল, টিসিআরসি, ডাস, ডিডিপি, অগ্রদূত, প্রজন্ম, শেয়ার, আলো, পিজিএস, প্রত্যাশা সামজিক উন্নয়ন সংস্থা মৌমাছি, সিয়াম, পদ্মা, আরডিএসএর কর্মকার্তা ও প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।