শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

মসলার বাজারে এবার মহামারীর প্রভাব

ঈদুল আজহার আগে মাংস রান্নার অপরিহার্য উপকরণ বিভিন্ন মসলার চাহিদা বেড়ে যায় বলে দামও বেড়ে যায়। কিন্তু এবার মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাজারে মসলার দরে তেমন একটা ওঠানামা দেখা যাচ্ছে না।

বিক্রেতারা বলছেন, গরম মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার একটা বড় অংশ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমদানি করা হয়। এবার করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেও আমদানি হয়েছে।

কিন্তু মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক সময়ের এবার মসলা তেমন একটা বিক্রি হয়নি। চাহিদা কম হওয়ায় সরবরাহও বেশি। তাই দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে ভোক্তাদের দাবি, গত কয়েক দিনে আদা ও রসুনের দাম বেশ বেড়েছে, অন্যান্য গরম মসলার দামও বাজারে অল্প করে বাড়ানো হয়েছে।

রামপুরার এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত তিন থেকে চার মাস ধরে দেখছি, বাজারে গরম মসলার দাম একটা জায়গাতে রয়েছে। এবার বড় কথা হল- কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও মসলার দাম সেই অর্থে বাড়েনি।”

তবে বাজারে হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোরবানি এলে মাংসে যেহেতু পেঁয়াজ, রসুন, আদা একটু বেশি লাগে, সেই মুহূর্তে এগুলোর দাম বাড়ানো মানে আমাদের হিসেবের বাইরে আরেকটু ব্যয় বেড়ে গেল।”

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি আদা অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় এবং চীনা আদা অন্তত ২০ টাকা ২০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়।

আর রসুন দেশি জাতের দাম কিছুটা কম থাকলেও আমদানি করা চীনা রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য মসলার দাম নিয়ে মহাখালীর বাস স্টেশন এলাকার মার্জিয়া ডিপার্মেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা খোরশেদ আলম জানান, তারা খুচরা পর্যায়ে জিরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চারুচিনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, এলাচি আড়াই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

এছাড়া শুকনো মরিচের কেজি ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, হলুদ ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, ধনে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মিরপুর-১ এলাকার হযরত শাহ আলী সিটি করপোরেশন মার্কেটের জান্নাত ভ্যারাইজিট স্টোর সব ধরণের মসলা পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকে।

ঈদে মসলার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এই দোকানের মালিক রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশে যে পরিমাণ মসলা আমদানি আছে, সেই অনুযায়ী বিক্রি তেমন নেই। লকডাউনে আমদানি তো বন্ধ হয়নি, কিন্তু বিক্রি ছিল না বললেই চলে।

“এখনও বহু ব্যবসায়ী আমদানিকারকের কাছে মসলা মজুদ আছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে আগে বহু মানুষ সারা বছরের মসলা একসাথে কিনতো, এখন আর সেই অবস্থা দেখা যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, যে সব খুচরা দোকানি ৫-১০ কেজি করে মসলা নিয়ে যেত, তারাই এখন এক বা দুই কেজির বেশি নিচ্ছেন না। তারাও তাদের বিক্রি কম বলে জানাচ্ছেন।

রফিকুল জানান, পাইকারিতে কেজিপ্রতি ভারতীয় জিরা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, ইরানি জিরা ৩৬০ টাকা, দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ৯৫০ থেকে এক হাজার, এলাচি এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনের কারণে সব ধরণের মসলার দাম এখন কম। গত দুই সপ্তাহের লকডাউনের কারণে মসলা অল্প-স্বল্প বিক্রি হয়েছে।

“গতকাল থেকে লকডাউন শিথিল হলেও এই দুই দিনে মফস্বল থেকে এখনও ব্যবসায়ীরা সেইভাবে আসছেন না বা অর্ডারও করছেন না।”

চারদিন পর কোরবানি হলেও বিক্রি নেই বলে পাইকারি বাজারে অধিকাংশ মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে শ্যামবাজারের পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস জানান, তারা পাইকারি দরে দেশি পেঁয়াজ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, বার্মিজ আদা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চায়না আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চায়না রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। তবে দেশি নাটোরের রসুন ৪০ থেকে ৪২ টাকা, ফরিদপুরের রসুন ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা, সাধারণ মানের রসুন ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০