রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
বিশ্বের যেসব দেশে এখন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি, তার একটি বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে (১২ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ) করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। আর মোট মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।
টানা তিন দিন ধরে দেশে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে প্রতি ১০ লাখে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার সংক্রমণে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০ অনুসারে দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। আর করোনায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৮৪২ জনের। সে হিসাবে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ২৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৭ জন। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছিল সরকার। এর প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরে লকডাউন ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। এ কারণে ঈদুল ফিতরের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এখন দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। আগের তুলনায় এবার ঢাকার বাইরে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যা ও আইসিইউর ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঢাকার বাইরে মৃত্যু বাড়তে থাকে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও খুলনায় মৃত্যু কমছে না। কিছুদিন ধরে রংপুর বিভাগেও মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে। বিভাগওয়ারি হিসাবে চলতি মাসের ১৩ দিনে সবচেয়ে বেশি ৬৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। একই সময়ে ঢাকায় মারা গেছেন ৬৬১ জন।
সংক্রমণ ঠেকাতে ১ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন আজ বুধবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। সাধারণত বিধিনিষেধ আরোপের দুই সপ্তাহের মাথায় সংক্রমণে তার প্রভাব দেখা যায়। এবার এখন পর্যন্ত লকডাউনের তেমন কোনো প্রভাব সংক্রমণচিত্রে দেখা যায়নি। তবে গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার সামান্য কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪১ হাজার ৭৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৯৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। রোগী শনাক্তের এই হার সর্বশেষ ৯ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বিধিনিষেধের প্রভাব দৃশ্যমান হওয়ার আগেই সবকিছু খুলে দেওয়ায় সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তাঁরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রোগী ব্যবস্থাপনা তথা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন) নেওয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কাজগুলো গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে।
সুত্র ঃ প্রথম আলো