মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এসএসসি-এইচএসসি, এবারও অটো পাস?

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবারও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন অনিশ্চয়তায় মধ্যে আবারও আলোচনায় পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস।

দেশে কোভিড সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে; যা এখনো চলমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত করা হয়েছে। এ সময়ের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসির মতো দুটি বড় পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও জেলায় জেলায় কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এ অনিশ্চয়তা আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।




আগামী জুলাইয়ে এসএসসি এবং এর এক মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তায় মাধ্যমিকে ৬০ দিন ও উচ্চমাধ্যমিকে ৮৪ দিন ক্লাস করার পরিকল্পনার কথা জানায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। সেই আলোকে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এক ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। তবে স্কুল-কলেজ খোলার আলোচনার মধ্যেই দেশব্যাপী কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ধরা পড়ে কোভিডের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন)। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের সীমান্তবর্তী ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলা বর্তমানে লকডাউনের আওতায় আছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে ভিন্ন চিন্তার কথা আলোচনায় আনেন। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সারা দেশের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবাই আবারও অটোপাসের বিষয়টি সামনে আনেন। যদিও মন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিন আন্তশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ অটোপাসে যেতে চান না বলে জানান। বোর্ডগুলো পরীক্ষা আয়োজনের জন্য একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলেন। তবে সময়মতো পরীক্ষা না নিতে পারলে ভিন্ন কী পদ্ধতি নেওয়া হতে পারে, সে বিষয়টি মন্ত্রী নিজেও পরিষ্কার করেননি।

এ বিষয়ে মন্ত্রী আগের দিনের মতো গতকালও সাংবাদিকদের বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে কি না, কোভিড পরিস্থিতি দেখে বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও ৮৪ দিনের সিলেবাস করেছি, সেগুলোর ওপর অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করে যাব। আরো কিছুদিন হয়তো দেখতে হবে। বিকল্প অনেকগুলো পদ্ধতি নিয়ে আমরা ভাবছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূল্যায়ন হতে পারে।’

পরীক্ষা যদি না হয় বিকল্প কী চিন্তা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক রকম চিন্তা আছে। এ মুহূর্তে বলে দিতে পারছি না, পরীক্ষা হবে কি হবে না। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। যদিও সেটা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে যেটাই হোক শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ মাথায় রেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

স্কুল কবে খোলা হবে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব চেষ্টা করছিলাম ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। তবে পরিস্থিতি প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। কোভিড সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন তো সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তাই অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।’

শিক্ষামন্ত্রী বিকল্প চিন্তার কথা বললেও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, পাঁচ-ছয় মাস পিছিয়ে হলেও এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে, তবু অটোপাস দেওয়া হবে না। মোটকথা ছোটখাটো আকারে হলেও পরীক্ষা হবে। গত বছর পুরো সিলেবাস শেষ করেছিল পরীক্ষার্থীরা। কোভিডের কারণে পরীক্ষা না নিয়ে আগের দুই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীরা পড়তেই পারেনি। তাই তাদের অটোপাস দেওয়ার সুযোগই নেই।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে অটোপাসের আলোচনা সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। তারা এবার কোনোভাবেই অটোপাসের দিকে হাঁটতে চান না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডগুলোর সাফ কথা পরীক্ষা হবেই, তা যত ছোট হোক। অথবা বিকল্প কোনো পদ্ধতি। কিন্তু বিকল্প কী, তা খোলাসা করেননি শিক্ষামন্ত্রী বা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা।

এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দেশে কোভিড পরিস্থিতি যেভাবে বাড়ছে, তাতে চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। অন্যথায় সিলেবাস শেষ না হলে এ দুই পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনও করা যাবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বা মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এ সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল। আর না পড়িয়ে কীভাবে সরকার অটোপাস দেবে, তাও বোধগম্য নয়। হয়তো সংক্ষিপ্ত কোনো পরীক্ষা বা মূল্যায়নের দিকে যেতে পারে শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে যাই করা হোক ছোট করে হলেও একটি পরীক্ষা অন্তত নিতেই হবে।’

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১