শ্রমিকের সাথে উত্তম ব্যবহারে মহানবীর শিক্ষা - Pallibarta.com

রবিবার, ৪ জুন ২০২৩

শ্রমিকের সাথে উত্তম ব্যবহারে মহানবীর শিক্ষা

শ্রমিকের সাথে উত্তম ব্যবহারে মহানবীর শিক্ষা

আজ ১লা মে। মহান মে দিবস। ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে মালিক-শ্রমিকের প্রীতিময় সম্পর্কের ভিত্তিতে শান্তিময় পরিবেশ গড়ার শিক্ষা দেয়। এখানে বৈষম্যের কোন শিক্ষা পাওয়া যায় না। ইসলাম কখনো কোন শ্রমিকের সাথে অন্যায় আচরণ করার শিক্ষা দেয়না। ইসলাম নিজ শ্রম দ্বারা হালাল উপার্জনকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। নিজের শ্রম দিয়ে হালালভাবে উপার্জন করার শিক্ষাই বিশ্বনবী (সা.) আমাদের শিখিয়ে গেছেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ‘ যখন নামাজ পড়া সমাপ্ত হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান কর’ (সুরা জুময়া: ১০)। আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা শুধু ইবাদত করার জন্যই বলেন নাই বরং বলা হয়েছে নামাজ শেষ করে জমিনে চলে যাবার জন্য অর্থাৎ জীবিকার সন্ধান করার জন্য।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমজীবীর উপার্জনই উৎকৃষ্টতর যদি তা সৎ উপার্জনশীল হয়’ (মুসনাদ আহমদ)। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের শ্রমের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে তার চেয়ে উত্তম আহার আর কেউ করে না। জেনে রাখ, আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জনে জীবিকা চালাতেন’ (বোখারি)।

একজন সৎকমীর্ শ্রমিক যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসে তখন আল্লাহপাক তার প্রতি এতই সন্তুষ্ট হন যে, তার গোনাহ মাফ করে দেন। এ ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শ্রমজনিত কারণে ক্লান্ত সন্ধ্যা যাপন করে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার সন্ধ্যা অতিবাহিত করে’ (তিবরানি)। একজন সৎকর্মশীল শ্রমিকের জন্য এর চেয়ে আনন্দ ও আশার বাণী আর কি হতে পারে? ইসলাম যেমনভাবে শ্রমের প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছে এবং একে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেছে তেমনিভাবে কাজকর্ম না করে সমাজ ও দেশের বোঝা হয়ে থাকাকে খুবই অপছন্দ করে। এছাড়া পরিশ্রম না করে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করাকেও ইসলাম অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় হিসেবে অভিহিত করেছে। ভিক্ষালব্ধ খাদ্যকে নবী করিম (সা.) ‘অগ্নিদগ্ধ পাথর বলে অভিহিত করেছেন’ (মুসলিম)।

ইসলামে শ্রমিকের কাজকে সর্বোচ্চ মূল্য দেয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মজুরি পরিশোধ কর।’ ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, মালিকের রক্ষক হল শ্রমিক। শ্রমিকের প্রতি জুলুম করা হলে ভয়াবহ অভিশাপ লাগবে।’ তিনি (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে নিজে রোজগার করে জীবন পরিচালনা করেন, আল্লাহ তার প্রতি খুশি। একবার হজরত রাসূল করিম (সা.)এর কাছে কোন এক সাহাবা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ধরণের উপার্জন শ্রেষ্ঠতর? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, নিজের শ্রম দ্বারা অর্জিত উপার্জন।

আজ আমরা দেখতে পাই শ্রমিকরা তাদের শ্রম ঠিকই দিচ্ছেন কিন্তু মালিক পক্ষ সঠিক পারিশ্রমিক দিচ্ছেন না আর এর ফলে বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত দাঙ্গাহাঙ্গামা হচ্ছে। এছাড়া এমনও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন আটকিয়ে রাখে। অথচ ইসলামের শিক্ষা হল ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মজুরি পরিশোধ কর।’

ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সব রকমের সমস্যার প্রকৃত সমাধান রয়েছে। ইসলাম তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ গঠন করতে মানুষকে শিক্ষা দিয়ে আসছে। আর ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো ন্যায়বিচার এবং শ্রমিকের মর্যাদাকে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।

ইসলামের দৃষ্টিতে একজন শ্রমিক মালিকের কাজের দায়িত্ব নিয়ে এমন এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যা শুধু তার সংসার নির্বাহের জন্য নয় বরং আখেরাতের সফলতা অর্জন করার ক্ষেত্রেও এ দায়িত্ব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ইসলামে মালিক ও শ্রমিকের ওপর আবশ্যক বিধিমালা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করেছে। কেননা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই যেকোনো বিষয়ে সঠিক ফয়সালা হতে পারে। শ্রমিকদের সম্পর্কে হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার মধ্যে ঈমানও নেই।

সুতরাং শ্রমিকেরও উচিত হবে তাদের ওপর অর্পিত দায়ীত্ব ও কর্তব্য বিশ্বস্ততার সাথে সুসম্পন্ন করা। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০