শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ
তেঁতুলিয়া উপজলায় প্রবাহিত নদীগুলার বুকে এখন ফসলের সবুজের হাসি। নদীর পানি প্রবাহ না থাকায় প্রাকতিক জীব বৈচিত্র হুমুকির মুখে। ভৌগলিকভাবে তেঁতুলিয়া উপজলার সাতটি ইউনিয়নের সীমানা উজান থেকে প্রবাহিত ছোট-বড় ৬টি নদী দ্বারা বিভক্ত হয়েছে। উপজেলার পশ্চিমে বাংলাদশ-ভারত সীমান্ত মহানন্দা নদী বিভক্ত হয়েছে। বাংলাবান্ধা ইউনিয়নকে তিরনই নদী বিভক্ত করছে। তিরনইহাট ইউনিয়নকে রণচন্ডি নদী এবং বেরং নদী তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নকে বিভক্ত করছে। এই নদী দু’টি খরস্রাত মহানন্দার শাখা নদী। এছাড়া শালবাহান ইউনিয়নকে ডাহুক নদী আলাদা করছে। আর বুড়াবুড়ী ইউনিয়নকে ভরসা নদী বিভক্ত করছে। একইভাবে ভজনপুর ইউনিয়নকে করোতায়া নদী বিভক্ত করেছে দেবনগর ইউনিয়নের মাগুড়মারী চৌরাস্তা নামক স্থানে তেঁতুলিয়া উপজলার সীমানায় শেষ হয়েছে। যা তেঁতুলিয়ার ইতিহাস ও পর্যটন শিল্পের বইয়েও উল্লখ করা হয়েছে।
ছোট-বড় এই নদীগুলো ভারত থেকে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়ার বুক চিরে ভাটির দিকে বয়ে চলা ডাহুক, করতোয়া ও চাওয়াই নদী জেলা শহরর পাশ দিয়ে বয়ে চলছে। নদী গুলোতে পানি প্রবাহ শুকিয়ে৷ যাওয়ায় নদীর বুকে ধূ ধূ বালুচর জেগে উঠেছে। পানি প্রবাহ না থাকায় তিরনই নদী, গবরা নদী, বরং নদী, ভেরসা নদী, ডাহুকের বুকে চর জেগে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর এসব মরা খালে এলাকার চাষীরা বোরো-ইরি ধানসহ নানান রবিশস্য চাষাবাদ করছে। বর্তমানে নদীর বুক ভরা জলরাশির বদলে সবুজ ফসলের মাঠ দৃশ্যপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। নদ-নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমে সাধারণ পানি প্রবাহ না থাকায় নদীর চারপাশের প্রাকতিক জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে ভারত অভিন্ন ৩৮টি নদীর উজানে রাবর ড্যাম, ব্যারজ ও গ্রায়ন নির্মাণ করেছে। এছাড়া ডাহুক নদীর উজানে ভারতের রায়গঞ্জ নামকস্থানে স্লুইচ গেট নির্মাণ করায় নদীটি মরে গেছে। অনুরুপভাবে ভারতের রায়গঞ্জ মদনবাড়ী ও ভদ্রেশ্বর সাও নদী ও করতোয়া নদীর মিলনস্থানের উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে নেয়ায় করতোয়ার বুকে বালুচর জেগেছে। নদীর উজান বাঁধর কারণ করতায়া ও চাওয়াই নদীর বুক ধূধূ বালুর চর জগ উঠছ। এসব নদীগুলাত পানি প্রবাহ না থাকায় দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ, ছোট বড় জলজ প্রাণিগুলো বিলীন হচ্ছে। নদীতে প্রয়োজনীয় পানি প্রবাহ না থাকায় আশপাশের ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। প্রাকতিক পরিবেশ ঘূর্ণিঝড়, প্রচন্ড খরা, নতুন পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের প্রাদূর্ভাব দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি গাছপালা ও প্রাকতিক পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এদিক বর্ষা মৌসূমে ভারত মাঝ মধ্যে সবগুলা নদ-নদীর স্লুইচ গেট একসঙ্গে খুলে দেয়ায় নদীর ভাটি অঞ্চলে ফসলের ক্ষতি সহ বাড়িঘর বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ মানসিকভাব হয়রানী হচ্ছে।
পানি উনয়ন বোর্ড ২০২১-২২ অর্থ বছরে তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই নদীটি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় খনন করে। এই নদীর খনন কাজের অনিয়ম-দূর্নীতি অনিয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সুশিল সমাজ নানা প্রশ তুলছে।
বাংলাদশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান বলেন, অনেক বড় বড় নদীতে অবৈধভাব বালু-পাথর উত্তালণ করায় নদীর সঠিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উজান বাঁধ নির্মাণ করায় ভাটির অঞ্চল নদীর পানি প্রবাহ নাই। ফলে অনেক নদী হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং নদীর আশপাশের জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখ পড়েছে। এই পরিবশীকর্মী ও সুশিল সমাজর ব্যক্তিবর্গ বর্তমান সরকার নদী প্রবাহ সচল করত নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পর উনয়নমূলক কাজগুলা সঠিকভাব বাস্তবায়নর জন্য প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের পক্ষ থেকে জোর তদারকির দাবী করছেন। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির হাত থেকে রক্ষার জন্য নদীর গতিপথ সচল রাখতে সরকারকে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলাচনা করে পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপার প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।