উলিপুরে সাবিনা হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন - Pallibarta.com

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

উলিপুরে সাবিনা হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন

উলিপুরে সাবিনা হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন

মোঃ এনামুল হক, রাজারহাট প্রতিনিধিঃ

বিয়ে করার কথা বলে সকালে বন্ধু নাঈমের খালি বাসায় সাবিনাকে ডেকে আনেন প্রেমিক সুমন। দুপুরে দু’জনে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় বেলা আড়াইটার দিকে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। দুই বন্ধু মিলে সাবিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। নাঈম দুই হাত চেপে ধরেন। আর প্রেমিক সুমন গলায় গামছা পেঁচিয়ে সাবিনাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ একটি ওয়ারড্রোপে ভরে পিকআপে তুলে নিয়ে ফেলে দেয় গাজীপুরের বিকেবাড়ি সড়কের পাশে। গত সোম ও মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালিয়ে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দিয়ে পিবিআইকে এসব তথ্য জানায়, সাবিনার মূল ঘাতক সুমন।

নিহত ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনা (৩২) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ডারার পাড় গ্রামের আয়নাল হকের মেয়ে। দুই বছর আগে স্বামীর সাথে তার ডিভোর্স হয়। তার ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। তিনি পাঁচ-ছয় বছর ধরে গাজীপুরের বিকেবাড়ি এলাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শেরপুরের নকলার মাওড়া গ্রামের মোর্তুজা আলীর ছেলে রাকিবুল হাসান সুমন (২৪), তার বন্ধু কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের ধনকুরা গ্রামের সুনু মিয়ার ছেলে নাঈম (২৭), সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ চৌবাড়ীর শাহ আলম আকন্দের ছেলে শাহরিয়ার আকন্দ (১৯) এবং টাঙ্গাইলের গোপালপুরের নবগ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে ফারুক হোসেন (২৪)। তাদের মধ্যে ফারুক পিকআপ চালক এবং অন্যরা গার্মেন্ট শ্রমিক ও পরস্পর বন্ধু।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, সুমন বিবাহিত। একই গার্মেন্টে চাকরির সুবাদে স্ত্রীর কথা গোপন রেখে দুই বছর আগে আট বছরের বড় সাবিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। পরে গাজীপুর বোর্ড বাজারের সাইনবোর্ড এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিন-চার মাস আগে প্রেমিকাকে ছেড়ে নগরীর বাসন থানার নাওজোড় এলাকায় স্ত্রীর কাছে চলে যান সুমন। প্রায় সময় সুমনকে ফোনে বিয়ের জন্য চাপ দিতেন সাবিনা। রাজি না হওয়ায় নাওজোড় এলাকার লোকজন দিয়ে সুমনকে মারধর করান প্রেমিকা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্ধু নাঈমকে নিয়ে সাবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সুমন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ে করার কথা বলে সাবিনাকে গত ১৩ অক্টোবর নাঈমের ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের পর হত্যা করেন। এরপর লাশ ঘরে রেখে বাসার কাছের একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে কিস্তিতে ১২ হাজার টাকায় একটি ওয়ারড্রোপ কিনে আনেন দুই বন্ধু। অপর বন্ধু শাহরিয়ারের সহায়তায় তিনজনে মিলে লাশ ওয়ারড্রোপে ভরেন। বেলা ৩টার দিকে পিকআপ ভাড়া করে ওয়ারড্রোপে লাশ বিকেবাড়ি সড়কের পাশে ফেলে রেখে আসেন।

ওই দিন মধ্যরাতে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে জয়দেবপুর থানার পুলিশ ওয়ারড্রোপে থেকে লাশটি উদ্ধার করে। রাতেই পিবিআই নিহতের আঙুলের ছাপ নিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের খবর দেয়। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিকআপচালককে ঢাকার আজিমপুর কাঁচাবাজার এবং অন্যদের গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাঈমকে বুধবার ও অন্যদের মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে সবাই বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১