সোমবার, ১৬ মে ২০২২
রানা প্লাজা ট্রাজেডির নয় বছর আজ। ২০১৩ সালের এদিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিভে যায় ১১শো’র বেশি তাজা প্রাণ। আহত হন আড়াই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। যা সকল অতীত রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়।
সেদিনের পর থেকে দীর্ঘ নয় বছরেরও থামেনি স্বজনের কান্না, পূরণ হয়নি দীর্ঘ দিনের দাবি। যদিও এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারের আন্তরিকতাকে দায়ি করছেন শ্রমিক নেতারা।
সরেজমিনে ধসে যাওয়া রানা প্লাজার জমিতে গিয়ে দেখা যায়, তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে জমিটি। ভেতরে জম্ম নিয়েছে অসংখ্য কচু গাছ আর নানা ধরনের লতাপাতা। সামনেই ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে নির্মিত একটি শ্রদ্ধা বেধি। যাকে ঘিরেই থাকে নানা কর্মসূচি। জায়গাটি নিয়ে স্থানীয়দের তেমন আগ্রহ না থাকলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দৃষ্টি থাকে সবসময়। নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের পদচারণা থাকে সবসময়।
সেখানেই কথা হয় ছেলেহারা এক মায়ের সঙ্গে। রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন আদরের ছেলে রাব্বি। সংসারে সুখ ফেরাতেই পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি নেন এখানকার একটি কারখানায়। সেদিনের সেই ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে তিনদিন পর ছেলের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই থেকেই ছেলের শেষ কর্মস্থলের এ জায়গাটিতে ছুটে আসেন তিনি। কোনো অনুদান পেতে নয়, দোষীর বিচার হবে এমনটাই আশা তার।
সঙ্গে আলাপকালে রাহেলা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের ছবি হাতে বলেন, নয় বছর আমার কাছে সেদিন। আমার টকবগে জোয়ান ছেলেটি চেয়েছিল পড়াশোনা করে মানুষ হবে। সে আর মানুষ হতে পারলো না। এখন রাতে ঘুমাতে পারি না, মা মা বলে ডেকে ওঠে খোকা। খুব কষ্টে থাকি তবুও হাত পাতিনি। আর পাততেও চাই না, শুধু চাই আমার ছেলে হত্যাকারীর বিচার।
তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, নয় বছরেও বিচার শেষ করতে পারলো না সরকার। তাহলে কেমন গুরুত্ব দিলো। গরিবের আল্লাহ আছে। আমার সন্তান হারার বিচার আমি আল্লাহর কাছে দিয়েছি। তিনি বিচার করবেন।
শুধু রাহেলা নয়, এমন কয়েক মাকে দেখা গেলো সেখানে। দীর্ঘ নয় বছরেও শুকায়নি যাদের চোখের জল। তাদের অবুঝ হৃদয় যেমন আজও খুঁজে ফেরে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে।
আরেক মা সুফিয়া। আদরের একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা। তিনি বলেন, ‘মাইয়াডার শোকে আমার স্বামীটাও মইরা গেল। চাইর বছর থেইকা আমি একা। কেউ কোনো খবর লয় না। মাইয়াডার লগে আল্লাহ আমারে নিয়া নিলে ভালা হইতো। হুনছি আমার মাইয়াডারে যে মারলো তাগো বিচার এহনও হয় নাই।’
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ঘটনার পর পর সরকার ও বিজিএমইএ অনেক ঘোষণা দিয়েছে। যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। নয় বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকার যদি আন্তরিক হতো তাহলে এতদিনে বিচার কাজ সম্পন্ন হতো।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের একটি দাবিও সরকার মানেনি। বরং বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে।